তাহলে সিদ্ধান্ত করুন আপনার সমস্ত অস্তিত্ব কেবল এবং কেবলমাত্র রাজনৈতিক হবে। দল নয়, একেবারে অস্তিত্বের প্রাথমিক লেভেল থেকেই সেই অভ্যাস শুরু করুন। যেভাবে একদিন সিদ্ধান্ত নেন কাল থেকে ভাজাভুজি কম খাবেন আর রোজ একঘন্টা অন্তত ব্যায়াম করবেন, যেভাবে কোলেস্টেরলের খেয়াল রাখেন, যেভাবে সিগারেট ছেড়েছেন অথবা অভ্যাস ধরে রেখেছেন, ঠিক সেইভাবে আপনার রাজনীতিকে, ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণকে প্রশ্ন করার রাজনীতি অভ্যাস করুন। প্রশ্ন করুন। প্রশ্ন করাটাও রেওয়াজ করুন। চব্বিশ ঘন্টার রেওয়াজের দায়িত্ব ঘাড়ে চাপান। অভ্যাস। অভ্যাস করুন। আপনার-আদরের-রঙে-আঘাত-লেগেছে-এই-দুঃখে-ছিলিম-টেনে-রেবেল-রেবেল-মুখ-করে-ভোট-দিইনি-দেখ-কিন্তু-বাস্তারকে-টোকেন-সলিডারিটি-জানিয়ে-ট্যাক্সিওয়ালা-দেখলেই-আপনি-থেকে-তুমিতে-নেমে-আসার রাজনীতি কে বর্জন করুন। তাতে আপনার ছিলিম টানার স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে কিনা কিম্বা যত্রতত্র যাহা খুশি বলিবার স্বাধীনতায় চোট লাগছে কিনা তাই নিয়ে বোকা মিনমিন করবেন না। আপনার শ্রেণিবোধে নিয়ম করে শান দিন। পড়ুন। রেডিমেড কামব্যাক লাইন নয়, বই পড়ুন। গোটা গাবদা বই। পুরোটা পড়া অভ্যাস করুন। পড়তে পড়তে প্রশ্ন করা অভ্যাস করুন। তারপর থিওরি কে নস্যাত করার মত সাহস, স্পর্ধা, এবং সর্বোপরি মুক্ত মগজ নিয়ে কাজ করুন। কাজ করা অভ্যাস করুন। অফিসের পাকা চাকরি ছেড়ে বন্দুক ধরতে হবে না, নিজ নিজ কিউবিকলেই আপাতত রাজনৈতিক হোন। একই অফিসে ঘাম ঝরিয়ে কেন শুধুমাত্র জেন্ডারের দায়ে আপনার সহকর্মীর প্রমোশন হলো না এইটুকুর বিরুদ্ধে গর্জে উঠুন। গর্জে ওঠা অভ্যাস করুন। গর্জে উঠে ক্ষান্ত না থাকাও অভ্যাস করুন। বিকল্প ভাবুন, ভাবা অভ্যাস করুন। ভাবতে গিয়ে অসহায় হয়ে তলিয়ে যান, কিন্তু ফিরে আসুন আপনার রাজনীতিতে। বেসিক এক লাইনের রাজনীতিতে। আপনার রাজনীতিকে কথায় প্রকাশ করা প্র্যাকটিস করুন – এক লাইনে বলার চেষ্টা করে দেখুন। সহজ ভাষায়, এক লাইনে গঠন করতে গিয়ে দেখুন আপনি হোঁচট খেলেন কিনা। হোঁচট অর্থে আপনার শব্দ গঠন করার স্কিলের অভাব ধরবেন না, হোঁচট অর্থে থাপ্পর। অর্থাৎ আপনার রাজনীতি আপনি যথেষ্ট বেঁচেছেন কিনা তার সারপ্রাইজ টেস্টে আপনার কিরকম পারফর্মেন্স। প্র্যাক্টিস করুন, প্র্যাক্টিস। সমর্থন করে-ফরে কম্ফর্ট জোনে গিয়ে ল্যাজ গোটাবেন না। আপনার ল্যাজেরও রাজনৈতিক হয়ে ওঠার দায়িত্ব রয়েছে, ল্যাজ সমেত তৈরী হোন। আর তৈরী করুন। মাধ্যমিকে গুচ্ছ নম্বর পেয়ে গদগদ সুশীল ভাইপোকে লক্ষ্য করুন, করে দেখুন আপনাকে দেখে যেমন তড়িঘড়ি সোফার জায়গা অফার করে, তেমন বাড়ির “কাজের মাসি” কেও করে কিনা। না করলে বলুন লজ্জিত হতে। লজ্জিত হওয়া অভ্যাস করতে বলুন। লজ্জিত হয়ে, অনুধাবন করে, অভ্যাস বদলানোর সিদ্ধান্ত করা পর্যন্ত এই যে লম্বা রাস্তার প্রত্যেকটা মোড় প্রত্যেক মানুষের জন্য যথেষ্ট নিরাপদ করে তোলার দায়িত্ব নিন। দায়িত্ব নেওয়া অভ্যাস করুন। আপনার প্রতিটি অভ্যাস আপনার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হোক। আপনার প্রতিটি সিদ্ধান্ত, রাজনৈতিক।