এই যে বেঁচে আছি, এর থেকে আজগুবি ব্যাপার আর হয় না। মরে যাওয়া এর থেকে ঢের বেশি স্থায়ী আর বিশ্বাসযোগ্য। সত্যি কথাটা হলো গত একবছরে লাইন দিয়ে মানুষেরা মরে গেছে। এইটা দারুণ সত্যি কথা হলো। তার আগেও পাল পাল লোক রোজ অদৃশ্য হয়েছে, কিন্তু আমি তো কখনওই তাদের পাশে বসে চা আর প্রজাপতি বিস্কুট খাইনি। কখনোও সময় হয়ে ওঠেনি, কখনোও অস্তিত্ব। এই যেমন কোপারনিকাস যেদিন মারা গেল সেদিন আমার অস্তিত্ব হয়ে ওঠেনি, হাতে সময়ও যে অঢেল ছিল এমন নয়। অস্তিত্বের আগেও তো ব্যস্ততা থাকে, ঠিক মত না থাকতে পারা আয়ত্ব করতে হয়। রেওয়াজ করতে হয়। আসল কথাটা হলো আমি সেদিন হেঁইও হেঁইও করে না থাকা প্রাক্টিস করছিলাম। একেবারে আসল কথা হলো এইটুকুই।
গত শতাব্দীর যে মাহেন্দ্রক্ষণে এই চিঠিটা লিখেছিলাম, সেই ক্ষণ কবে লোপাট হয়েছে। আমিও সেদিনের পর থেকে খোলস পাল্টেই চলেছি। স্টেশনে নেমে পড়ার পর ট্রেনটার দিকেও তাকাইনি, আমি তাকাইনা। কোনোও যাত্রার দিকেই বেশিক্ষণ তাকাতে নেই, চোখ লাল হয়ে আসে।
শতাব্দী পার করে তবু আমাদের এই চলে যেতে থাকা, চলে যেতে যেতে দেখা, লাইন দিয়ে চলে যাচ্ছে মানুষেরা। আমাদের মানুষেরা। এতে কোনও রহস্য নেই। শুধু থেকে গেছে সবুজ ঘাস, ঝাঁকড়া গাছ, ব্রাউন কটেজ, তাতে সাদা সাদা পর্দা লাগানো জানলা, ড্রয়িংখাতার মত নীল আকাশ। অনেক দূরের এই সন্ধ্যেবেলায় আজ মনে হচ্ছে, কি ভীষণ রহস্যময় সেই সব থেকে যাওয়া!