আমি উচ্চমাধ্যমিকে বাংলায় ছেষট্টি পেয়েছিলাম, আর ভারী খুশি হয়েছিলাম। তারপর এর ওর নম্বর শুনে বুঝলাম, ওইভাবে আহাম্মকের মত খুশি হওয়াটা আমার ঠিক উচিত কাজ হয়নি। যাইহোক আমি কিন্তু ভাই, বাংলায় লিখতে, পড়তে, ঝগড়া করতে, গান শুনতে, গুনগুন করতে, রেগে গিয়ে বিড়বিড় করতে, এমন কি নতুন নতুন খিস্তি আবিস্কার করতেও (আদিরসাত্মক গুলো একটু কটাস কটাস করে কানে লাগে বটে) বেশ ভালবাসি। এর জন্য আমার নম্বর বা গাঁদা ফুলের মালা কিছুই চাইনা – কিবোর্ড ছুয়ে বলছি!
আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন প্রচেষ্টা – ভালোভাষা। সারা শহর জুড়ে প্রথমে নানান টিপ্পুনি-পোস্টার, চিমটি-ব্যানার – ‘বাংলা ভাষা কি ‘কুল’ নয়? SMS করুন আপনার মতামত জানিয়ে এই নাম্বারে’ ইত্যাদি, তারপর অচিরেই ঝেড়ে কেশে বার্তা – ‘বাংলা ভাষা কে উদ্ধার করতে আনন্দবাজারের নতুন প্রচেষ্টা’ – প্রত্যেক জেলার মাধ্যমিকে বাংলায় সর্বচ্চো নম্বর প্রাপককে পুরস্কৃত করা এই প্রচেষ্টার প্রথম পদক্ষেপ। আমি চিরকাল পরীক্ষায় ধেড়িয়েছি বলে বলছি না, এতটুকু হিংসা নেই আমার সর্বচ্চো নম্বর প্রাপকগণ কে, কিন্তু, আমার সত্যি কষ্ট হচ্ছে। গলায় দলা পাকানো কষ্ট – যাতে অনেক দুঃখ একসাথে ঠেলে আসে, আর ঠিক বোঝানো যায় না কোথায় ব্যাথা, তারপর রাগ আসে, একটু একটু করে অনেক। সেই রাগ পাল্টে যদিও বা হয়েও যায় ফিসফাস, ল্যাদাডুস অকর্মন্য বাঙালি বলে, আর ফিসফাস কিন্তু পাল্টায় না হঠাত কারোর প্রচণ্ড চিত্কারে। বারো বছর ধরে মা কে অনেক ভালোবেসেছ, এই নাও হাজার খানেক টাকা, একটি ঝিনুকবাটি ও ‘পরম সন্তান’ উপাধি – এরকমও তাহলে দেওয়া হবে কোনো শিশুকে? বাংলা হতেই তো পারে কোনো ম্যারমেরে সেকেলে ভাষা – তাতেই বা সমস্যাটা কি? আমি আমার বাবা কে ভালোবাসি, সেটা বাবার ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি আছে বলে, নাকি মানুষটা আমার বাবা বলে? সোজা হিসেব। সোয়া ঘন্টার পথ। গেলেই হলো! আমাকে যেমন ফার্স্ট ইয়ারে, এক কলেজ সিনিয়র একবার তার বন্ধুর জন্য সালিশী করতে এসে বলেছিল – ‘ভালো ছেলে, নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন।’ আমি খুবই নির্লিপ্ত ভাবে বলেছিলাম ‘শুনে খুশি হলাম। কিন্তু সবাইকে ভালো ছেলেদের সাথেই প্রেম করতে হবে এরম কোনো কথা আছে কি ?’ আমার ভাষা আমার কাছে কেমন, উত্তেজিত হলে কেন সেই ভাষাতে আমি হঠাত করে অসাবধানী কিছু বলে বসে জিভ কাটব – এসবের কোনো সংজ্ঞা হয় না। এগুলো সেখান থেকে আসে যেখান থেকে প্রথম কান্না আর প্রিয় মানুষের উপর অভিমান আসে, কয়েন আকাশে থাকতে থাকতে মনের যে জায়গাটা সেকেন্ডের মধ্যে আসল ইচ্ছে জানিয়ে দিয়ে দোটানার অবসান ঘটানোর জন্য বিখ্যাত – সেখানটা তে আমার বাংলা আছে। আরও অনেকেরই আছে আমি জানি। অনেকে হয়ত সেটা জানায় না, হয়তো ভাবে জাত যাবে, ‘কুল’ত্ব নষ্ট হবে – সেটা হয়ত সময় বাহিত সংক্রামক – ব্যাধি না হলেও, এক ধরনের অভ্যেস তো বটেই। সে ঘটনা নিতান্তই দুঃখজনক, কিন্তু তাই বলে জীবনটাকে নম্বরে কেন মাপছিস? বাংলা যথেষ্ট চকচকে কিনা এই তর্ক যতটাই অবান্তর, মাধ্যমিকে ‘বিজ্ঞান আশির্বাদ না অভিশাপ’ রচনাতে, ভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ, উপসংহারে সত্যেন বোস, আর এদিক ওদিকে ‘জনৈক মনীষীর মতে’ লাগিয়ে পাতা ভরিয়ে গুচ্ছ নম্বর বাগিয়ে কিছু প্রমান হয়না।
সত্যি বলতে কি, কিছু প্রমান করার নেইও। অনুভব করার আছে। আমার এক ইংরিজি-ইংরিজি দিদির প্রেমে পড়েছিল আমারই পরিচিত এক ছেলে, আর আমার পড়েছিল চিঠি পৌছানোর কাজ। চিঠি বলতে একটা সাদা কাগজ বেসামাল ভাবে ছেঁড়া, তাতে কালো কালিতে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা – ‘তুমি যতই বল ‘This is not feasible’, আমার মাথায় ঢুকবে না।’ আমরা ভারী খোরাক হবে ভেবে একসাথেই পড়তে গিয়েছিলাম চিঠিটা, তারপর থমকে গেছিলাম, দুজনেই। আর আমার এই দিদিটি খুব ধীরে ধীরে, যেন খুব আগলে রাখা কোনো দামী জিনিস হাতে নিচ্ছে, এমন সাবধানে বলেছিল, ‘বাংলা ভাষাটা কী মিষ্টি রে!’ সেই ছেলেকেও হয়ত মনে মনে ছেষট্টি দিয়েছিল কি ও? ছেলেটিরও অন্যরা কত পেয়েছে জানার ছিল না। এই নম্বর কেউ জানতে চায় না, এই নম্বর কাউকে জানাতে নেই, অথচ এই নম্বরের আদরেই এক একটা ভাষা বেঁচে থাকে, কত কত বছর ধরে!
পুনশ্চ: আনন্দবাজারের এই মহান প্রচেষ্টার নামটি কিন্তু আমার সত্যিই বেড়ে লেগেছে। ওই নামটাই এখানেও থাকলো।
আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন প্রচেষ্টা – ভালোভাষা। সারা শহর জুড়ে প্রথমে নানান টিপ্পুনি-পোস্টার, চিমটি-ব্যানার – ‘বাংলা ভাষা কি ‘কুল’ নয়? SMS করুন আপনার মতামত জানিয়ে এই নাম্বারে’ ইত্যাদি, তারপর অচিরেই ঝেড়ে কেশে বার্তা – ‘বাংলা ভাষা কে উদ্ধার করতে আনন্দবাজারের নতুন প্রচেষ্টা’ – প্রত্যেক জেলার মাধ্যমিকে বাংলায় সর্বচ্চো নম্বর প্রাপককে পুরস্কৃত করা এই প্রচেষ্টার প্রথম পদক্ষেপ। আমি চিরকাল পরীক্ষায় ধেড়িয়েছি বলে বলছি না, এতটুকু হিংসা নেই আমার সর্বচ্চো নম্বর প্রাপকগণ কে, কিন্তু, আমার সত্যি কষ্ট হচ্ছে। গলায় দলা পাকানো কষ্ট – যাতে অনেক দুঃখ একসাথে ঠেলে আসে, আর ঠিক বোঝানো যায় না কোথায় ব্যাথা, তারপর রাগ আসে, একটু একটু করে অনেক। সেই রাগ পাল্টে যদিও বা হয়েও যায় ফিসফাস, ল্যাদাডুস অকর্মন্য বাঙালি বলে, আর ফিসফাস কিন্তু পাল্টায় না হঠাত কারোর প্রচণ্ড চিত্কারে। বারো বছর ধরে মা কে অনেক ভালোবেসেছ, এই নাও হাজার খানেক টাকা, একটি ঝিনুকবাটি ও ‘পরম সন্তান’ উপাধি – এরকমও তাহলে দেওয়া হবে কোনো শিশুকে? বাংলা হতেই তো পারে কোনো ম্যারমেরে সেকেলে ভাষা – তাতেই বা সমস্যাটা কি? আমি আমার বাবা কে ভালোবাসি, সেটা বাবার ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি আছে বলে, নাকি মানুষটা আমার বাবা বলে? সোজা হিসেব। সোয়া ঘন্টার পথ। গেলেই হলো! আমাকে যেমন ফার্স্ট ইয়ারে, এক কলেজ সিনিয়র একবার তার বন্ধুর জন্য সালিশী করতে এসে বলেছিল – ‘ভালো ছেলে, নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন।’ আমি খুবই নির্লিপ্ত ভাবে বলেছিলাম ‘শুনে খুশি হলাম। কিন্তু সবাইকে ভালো ছেলেদের সাথেই প্রেম করতে হবে এরম কোনো কথা আছে কি ?’ আমার ভাষা আমার কাছে কেমন, উত্তেজিত হলে কেন সেই ভাষাতে আমি হঠাত করে অসাবধানী কিছু বলে বসে জিভ কাটব – এসবের কোনো সংজ্ঞা হয় না। এগুলো সেখান থেকে আসে যেখান থেকে প্রথম কান্না আর প্রিয় মানুষের উপর অভিমান আসে, কয়েন আকাশে থাকতে থাকতে মনের যে জায়গাটা সেকেন্ডের মধ্যে আসল ইচ্ছে জানিয়ে দিয়ে দোটানার অবসান ঘটানোর জন্য বিখ্যাত – সেখানটা তে আমার বাংলা আছে। আরও অনেকেরই আছে আমি জানি। অনেকে হয়ত সেটা জানায় না, হয়তো ভাবে জাত যাবে, ‘কুল’ত্ব নষ্ট হবে – সেটা হয়ত সময় বাহিত সংক্রামক – ব্যাধি না হলেও, এক ধরনের অভ্যেস তো বটেই। সে ঘটনা নিতান্তই দুঃখজনক, কিন্তু তাই বলে জীবনটাকে নম্বরে কেন মাপছিস? বাংলা যথেষ্ট চকচকে কিনা এই তর্ক যতটাই অবান্তর, মাধ্যমিকে ‘বিজ্ঞান আশির্বাদ না অভিশাপ’ রচনাতে, ভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ, উপসংহারে সত্যেন বোস, আর এদিক ওদিকে ‘জনৈক মনীষীর মতে’ লাগিয়ে পাতা ভরিয়ে গুচ্ছ নম্বর বাগিয়ে কিছু প্রমান হয়না।
সত্যি বলতে কি, কিছু প্রমান করার নেইও। অনুভব করার আছে। আমার এক ইংরিজি-ইংরিজি দিদির প্রেমে পড়েছিল আমারই পরিচিত এক ছেলে, আর আমার পড়েছিল চিঠি পৌছানোর কাজ। চিঠি বলতে একটা সাদা কাগজ বেসামাল ভাবে ছেঁড়া, তাতে কালো কালিতে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা – ‘তুমি যতই বল ‘This is not feasible’, আমার মাথায় ঢুকবে না।’ আমরা ভারী খোরাক হবে ভেবে একসাথেই পড়তে গিয়েছিলাম চিঠিটা, তারপর থমকে গেছিলাম, দুজনেই। আর আমার এই দিদিটি খুব ধীরে ধীরে, যেন খুব আগলে রাখা কোনো দামী জিনিস হাতে নিচ্ছে, এমন সাবধানে বলেছিল, ‘বাংলা ভাষাটা কী মিষ্টি রে!’ সেই ছেলেকেও হয়ত মনে মনে ছেষট্টি দিয়েছিল কি ও? ছেলেটিরও অন্যরা কত পেয়েছে জানার ছিল না। এই নম্বর কেউ জানতে চায় না, এই নম্বর কাউকে জানাতে নেই, অথচ এই নম্বরের আদরেই এক একটা ভাষা বেঁচে থাকে, কত কত বছর ধরে!
পুনশ্চ: আনন্দবাজারের এই মহান প্রচেষ্টার নামটি কিন্তু আমার সত্যিই বেড়ে লেগেছে। ওই নামটাই এখানেও থাকলো।
Ahh, this is what you blogged about. I see you blogged, but not something I'd be able to read!
One promise kept – two more to go! 🙂
এটাই বাকি ছিল। লোকেদের বিরক্ত করে স্বীকার করিয়ে নেওয়া যে "আম্মো কুল"। মানে সার্টিফিকেট না দিলে তো কুল কোশেন্ট হয় না। যত্তসব মাকালপনা।
besh dharalo shanito ostrer byabohar dekhlam lekha tae…. besh bhalo laglo.. !! amader kache jibon tai jano sob kichu ke quantify korar byartho procheshta… !! aar se quantification take glorify korte somaj boshe… !! … sob kichui eki jaegae eshe thame, " babu, tumi koto pele ? " …. !! hoeto ekta shomoe ashbe jokhn baba baba ma r sathe sontan er somporko keo sei "quantify" kora hobe…. aar eta e obak hoar o to kichu nei.. !! jodi matribhasar proti bhalobasha ke quantify korte pare ,.. tahole pita matar proti bhalobasha ke kano na ? :O
big-gap-on 😉
Shesh Paragraph ta… :')
2nd last para r last line 3 te byapok..:)